শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
অ্যাডভোকেট আকন্দের মুক্তির দাবিতে আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলন

অ্যাডভোকেট আকন্দের মুক্তির দাবিতে আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলন

স্বদেশ ডেস্ক:

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দের মুক্তি ও নারায়নগঞ্জে নিজ চেম্বার থেকে দুই আইনজীবীকে তুলে নেয়ার যাওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের মুক্তির দাবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা।

বুধবার (২৫ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দ এবং সিনিয়র আইনজীবীদের এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদনীন বলেন, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের (ইউএলএফ) নেতা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দকে তার বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেছে। তিনি অসুস্থ, আমরা অবিলম্বে তার মুক্তি চাই।

সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এডহক কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী মহসিন রশিদ দুই আইনজীবীকে তাদের চেম্বার থেকে তুলে নেয়ার অভিযোগে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, জামিন নিতে সুপ্রিম কোর্টে আসলে এবং আইনজীবদের চেম্বার থেকে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার অলিখিত কনভেনশন রয়েছে। তার পরেও বিনা পরোয়ানায় নারায়নগঞ্জের দু’জন ল‘ইয়ারকে চেম্বার থেকে তুরে নেয়া হয়েছে। যদিও আমাদের আইনজীবীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পরে তাদের দু’জনকে ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু আজ সকালে ল’ইয়ার ফ্রন্টের নেতা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দকে তুলে নেয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের পক্ষ থেকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) ও পুলিশ কমিশনারের প্রতি আহ্বান জানাবো। আপনারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এ সময় তিনিও মতিউর রহমান আকন্দের মুক্তি দাবি জানান।

ইউএলএফের কো-কনভেনর সিনিযর আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলও তার মুক্তির দাবি তোলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলে সভাপতি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, এডহক কিমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সভাপতি জগলুল হায়দার আফ্রিক, ড. গোলাম রহমান ভূইয়া, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদক মাহবুবুর রহমান খান, আইনজীবী ইউসুফ আলী, মো: আক্তারুজ্জামান, নাসরিন আক্তার প্রমুখ।

আনসার বাহিনীকে আটকের ক্ষমতা দিয়ে উত্থাপন করা বিল বিসংবিধান পরিপন্থী:
সংবাদ সম্মেলনে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের (ইউএলএফ) কো-কনভেনর সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, পুলিশের ক্ষমতা খর্ব করে আনসার বাহিনীকে আটক করার ক্ষমতা দিয়ে যে বিল উত্থাপন করা হয়েছে সেটা সংবিধান পরিপন্থী।

তিনি বলেন, আজকে এই (আনসার) বাহিনীকে রক্ষীবাহিনীর মতো আরেকটা বাহিনী তৈরি করে পুলিশের ক্ষমতা খর্ব করে আপনি তাদেরকে সব ধরনের ক্ষমতা দিয়ে দিচ্ছেন। আমি মনে করি সরকার আনসার বাহিনীকে পুলিশের মতো সব ধরনের ক্ষমতা দিয়ে আরেকটা রক্ষীবাহিনী করতে চায়। আমি আজ এই সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আনসার বাহিনীকে ক্ষমতা দিয়ে যে আইনটা উত্থাপিত হয়েছে তা সংবিধান পরিপন্থী।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইউএলএফের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, নারায়ণগঞ্জ আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত দুই আইনজীবীকে গত ২৩ অক্টোবর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের চেম্বার থেকে তুলে নিয়ে যায়। সারারাত তাদেরকে ডিবি হেফাজতে রেখে পরদিন দুপুরে আইনজীবীদের প্রতিবাদের মুখে ছেড়ে দেয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ/মামলা চলমান নেই। এছাড়া আজ সকাল ঢাকার বাসা থেকে বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের মহাসচিব অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আইনজীবীদের এভাবে নিজ পেশাগত চেম্বার থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার এই ঘটনায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। আইনজীবীরা পেশা পরিচালনায় আতঙ্ক বোধ করছেন। আমরা প্রথমেই এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে স্বাধীনভাবে পেশা পরিচালনার স্বার্থে আইনজীবী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, পৃথিবীর সব সভ্য দেশে আদালত প্রাঙ্গণ ও আইনজীবীদের চেম্বারকে বিচারপ্রার্থীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আইনজীবীর চেম্বার থেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতারের ঘটনায় পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট ওই গ্রেফতারকে অবৈধ ঘোষণা করে তাকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন।

দুই আইনজীবীকে চেম্বার থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটিকে কোনো ক্ষীণ রাজনৈতিক দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, মহান আইন পেশার সম্মান রক্ষার্থে সব আইনজীবীদের এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলা জরুরি। একই সাথে বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান হিসেবে আমরা প্রত্যাশা করব, প্রধান বিচারপতি এই ঘটনা সম্পর্কে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যাতে আইন পেশার সুমহান মর্যাদা সমুন্নত থাকে। দেশের কোনো নাগরিক যেন এভাবে পুলিশি হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার না হন। .

ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, পুলিশের বাড়াবাড়ির সর্বশেষ নমুনা দুই আইনজীবীকে চেম্বার থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির কাছে আহ্বান জানাবো এ ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে আইনজীবী আন্দোলন কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877